হার্টের সমস্যা হলে তো বুকে ব্যথা করত! কই, আমার তো কোনো বুকে ব্যথা ছিল না। অনেক হৃদ রোগী এ প্রশ্ন তোলেন। কথা ঠিক। করোনারি আর্টারি ডিজিজে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনিগুলোতে চর্বি জমে, ফলে কমে যায় হৃদ্যন্ত্রে রক্ত সরবরাহ। একটু পরিশ্রম করলে, সিঁড়ি ভাঙলে শুরু হয়ে যায় ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত হয় বুকের মধ্যখানে, চাপ দিয়ে ধরে থাকে, পরিশ্রম করলে বাড়ে, বিশ্রাম নিলে আবার কমে। তবে মনে রাখবেন, অনেক মানুষেরই এই ধরনের ব্যথা বা উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে আপনার হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনিগুলো বিপজ্জনকভাবে বন্ধ বা ব্লক হয়ে আছে, কিন্তু আপনার কোনো দিনই বুকে ব্যথা হয়নি। আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের পরই শুধু তা ধরা পড়ল।
এই সমস্যা বেশি হয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। ডায়াবেটিসের কারণে তাঁদের জটিলতা দেখা দেয়, ফলে উপসর্গগুলো ঠিকমতো টের পাওয়া যায় না। সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকও তাঁদেরই বেশি হয়। বুকে ব্যথা ছাড়া অন্য রকম উপসর্গ নিয়ে নারীদের হৃদ্রোগ বেশি ধরা পড়ে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এমন ওষুধ খান, যা অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমকে দাবিয়ে রাখে, তাঁদেরও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাঁরা সব সময় ভারী ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত, তাঁদের মূল ধমনি ব্লক হওয়ার পরও আশপাশের রক্তনালিগুলো সক্রিয় থাকে ও হৃদ্যন্ত্রে রক্ত সরবরাহ চালিয়ে যায়। এ কারণে তাঁদেরও অনেক সময় পরিশ্রমে বুকে ব্যথা হয় না।
বুকে ব্যথা ছাড়াও হৃদ্রোগের আরও উপসর্গ আছে। এগুলোকে অবহেলা করবেন না। যেমন, পরিশ্রমে প্রচুর ঘাম হওয়া ও অস্বস্তি বোধ হওয়া। ফিটনেস লেভেল কমে যাওয়া। বাম হাত, চোয়াল, ঘাড় এমনকি পিঠে ব্যথা নিয়েও হৃদ্রোগ দেখা দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মতো অনুভূতি, বুক জ্বালা, বুক-পেটের মধ্যবর্তী এলাকায় ব্যথা—এগুলোও ফেলনা নয়। বমি ভাব বা বমিও হতে পারে উপসর্গ। মাথা হালকা বোধ হওয়া, ঝিমঝিম করা, রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা নিয়ে হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়তে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যাকেও আমলে নিন।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
সোর্স – প্রথম আলো